মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫
ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Post

ভারী বর্ষণে ডুবেছে নোয়াখালী  শহর

নোয়াখালী প্রতিনিধি

ভারী বর্ষণে ডুবেছে নোয়াখালী  শহর

নোয়াখালীতে টানা ভারী বর্ষণে ডুবেছে জেলা শহর ও আশপাশের এলাকা। পরিস্থিতি এমন যেন মাছ চাষের উপযোগী খণ্ড খণ্ড খামার। নোয়াখালী জুড়ে জলাবদ্ধতায় আটকে আছে লাখো বাসিন্দা। ডুবে গেছে পাড়া মহল্লার অলি গলি ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, হাট-বাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতেও ঢুকছে পানি। বাদ যায়নি সরকারি অফিসসমূহ। জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে পরীক্ষার্থী ও কর্মব্যস্ত মানুষ। এদিকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দুদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পৌরমেয়র।

গত মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর নোয়াখালী কার্যালয় জানিয়েছেন, গত সোমবার দিবাগত রাত থেকে পরদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪ দিন হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী, অফিসগামী মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে।

সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন স্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসসমূহ ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ডুবে গেছে শিল্পকলা একাডেমির সড়ক, নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সড়ক, নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ সড়ক, বসিরার দোকান ইমামবাজার সড়ক, মাস্টারপাড়া সড়ক, পাঁচ রাস্তার মোড় সড়ক, এম এ রশিদ উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, হরিনারায়নপুর সংযোগ সড়কসহ ডুবুডুবু অবস্থায় আছে নোয়াখালী-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ।

জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়। অফিস কক্ষে পানি ঢুকে যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম। পানিতে ডুবে গেছে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা সিভিল সার্জন বাসভবনের সড়ক। এছাড়া পানিতে ডুবে গেছে জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি অফিসসমূহ।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে চলমান এইচএসসি সমমান পরীক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজে হাঁটু পরিমাণ পানি ডিঙিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের বহন করা সিএনজি অটো যানবাহনগুলো পানিতে ডুবে ইঞ্জিন বিকল হতে দেখা গেছে।

মাইজদী শহরের অটোচালক মুরাদ হোসেন জানান, সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরেছি প্রায় সকল রাস্তাতেই পানি উঠে গেছে। আমরা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী ও দুর্ভোগে পড়া মানুষদের সুবিধার্থে অটো চালাচ্ছি। কিন্তু পানিতে ডুবে আমাদের গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শহরের লক্ষ্মীনারায়নপুরে বসবাসকারী বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক ও ড্রেন সংস্কার করে কোন লাভ নেই এতে করে জলাবদ্ধতা যেমন হয় তেমনি সরকারি অর্থেরও অপচয় হয়। শেষ ফলাফল এসব ড্রেন পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজেই আসে না। কোন ইঞ্জিনিয়ার এসব ড্রেনের প্ল্যানিং তৈরি করে মাথায় আসে না। বেশিরভাগ ড্রেন ও নালা অকেজো হয়ে রয়েছে।

আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভারী বর্ষণের ফলে আমার অফিস ও সড়ক ডুবেছে। বৃষ্টির মাত্রা কমে আসলেও আমি এখনও জলাবদ্ধতায় আটকে আছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল  বলেন, জলাবদ্ধতা রোধ প্রকল্পে শহর ও আশপাশের ১৬১ কিলোমিটার খাল খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী। সঙ্গে সঙ্গে নোয়াখালী খালও খনন করা হয়েছে। যেটা নোয়াখালীর দুঃখ ছিল। তবে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ড্রেন ও নালা রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

নোয়াখালীর পৌরমেয়র সহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, আমার কর্মীরা কাজ করছে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সাময়িকভাবে এটা হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে এটি সমাধান হয়ে যাবে বলে আমি আশা করছি।

টিএইচ